সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা নিম্নলিখিত কোন প্রকার সভ্যতার উদাহরণ?

সঠিক উত্তর হল ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা।

• জন মার্শাল প্রথম গবেষক হিসাবে ‘সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
• রেডিও-কার্বন ডেটিং অনুসারে সিন্ধু সভ্যতা 2500 - 1750 খ্রীষ্টপূর্ব সময়কালে বিস্তারলাভ করে।
• সিন্ধু সভ্যতা হল ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা।
• হরপ্পা সভ্যতার সর্বাধিক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি ছিল হরপ্পার নগরায়ণ।
• এছাড়াও, সিন্ধু সভ্যতায় ভেড়া ও ছাগল, কুকুর, গরু মহিষ এবং হাতিদের গৃহপালিত করা হয়েছিল।
• রাজধানী শহরগুলি হল মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা।

সিন্ধু সভ্যতার স্থাপত্যগুলির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

• নগর ব্যবস্থা- লক্ষণীয় নগর পরিকল্পনা, এবং নিষ্কাশন এবং পয়ঃপ্রণালী এর একটি দুর্দান্ত ব্যবস্থা।
• বড় শহর দুটি অংশে বিভক্ত- পশ্চিমে কাদা-ইটের উঁচু অঞ্চলের উপরে নির্মিত ‘দুর্গ’। পূর্বের শহরটি আবাসিক এলাকার প্রধান কেন্দ্র ছিল, এটিও একটি বিশাল ইটের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল।
• রাস্তাঘাট- সূক্ষ্ম নিকাশী ব্যবস্থা, সুবিন্যস্ত জল সরবরাহ ব্যবস্থা, পথের আলো ব্যবস্থা, আইন ভঙ্গকারীদের অপসারণের জন্য রাত্রিকালীন প্রহরী ব্যবস্থা, আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ অপসারণের জন্য বিশেষ ক্ষেত্র, প্রতিটি রাস্তায় জনসাধারণের সুবিধার্থে কূপ, প্রতিটি বাড়ির প্রধান রাস্তাগুলি 9 ফুট থেকে 30–34 ফুট পর্যন্ত প্রসারিত করে সেগুলিকে সমগ্র শহরব্যাপী সরু রাস্তাগুলির একটি নেটওয়ার্কে বিভক্ত করা হয়েছিল।
• নির্মাণ উপাদান- সিন্ধু শহরগুলিতে পাথরের গৃহ ছিলনা এবং সিঁড়িগুলি বৃহদাকারের ছিল; ছাদগুলি ছিল সমতল এবং কাঠে দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল।
• ব্যবহৃত উপাদান- পোড়া ইট এবং সূর্যে শুকনো ইট
• নিকাশী ব্যবস্থা- উন্নত নিকাশী ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা। প্রতিটি বাড়িতে অনুভূমিক এবং উল্লম্ব নালা ছিল এবং বাড়ির নর্দমাগুলিকে রাস্তার নর্দমাগুলির সাথে সংযুক্ত ছিল। রাস্তাগুলির জন্য ভূগর্ভস্থ নর্দমা ছিল এবং সেখানে নর্দমাগুলির উপরে পাথরের বিশাল খন্ড দ্বারা আবৃত করা থাকত। ভিজে পিট তৈরিতে ইট ব্যবহার করা হত।
• বৃহৎ শস্যভান্ডার-  169 ফুট x 135 ফুট পরিমাপের হরপ্পার বিশালাকার শস্যভান্ডারটিতে দুটি কক্ষবিশিষ্ট ঘর ও একটি সাধারণ উঠান অবস্থিত ছিল।
• বৃহৎ স্নানাগার- এই বিশালাকার স্নানাগারের সামগ্রিক মাত্রা ছিল 180 ফুট x 108 ফুট । স্নানের জন্য জলাশয়টি 8 ফুট গভীরতার সাথে প্রায় 39 ফুট দীর্ঘ ও 23 ফুট প্রস্থযুক্ত করা হয়েছিল। স্নানের জলাশয়টির জল পূরণ এবং খালি করার জন্য একটি যন্ত্র রয়েছে এবং স্নানের জলাশয়টির চারদিকে দীর্ঘ বারান্দা ও কক্ষগুলি ছিল।
• হরপ্পা নগর পরিকল্পনা সমসাময়িক সভ্যতার সাপেক্ষে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারে পরিণত হয়েছে এবং আমরা তাদের স্নানের জলাশয়টির এবং শস্যভান্ডারগুলির ধারণা থেকে আধুনিক সময়ের সাঁতারের জলাশয় এবং ভান্ডারের একটি ধারণা পেতে পারি।
• সব মিলিয়ে হরপ্পা শহর পরিকল্পনাটি অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক ছিল এবং স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে হরপ্পার ব্যক্তি মূলত নগরবাসী ছিল।

প্রধান শহরগুলির নাম নীচে দেওয়া হল:

• মহেঞ্জোদারো (সিন্ধু) - এটি সিন্ধুর ডান তীরে অবস্থিত।
• কালীবাঙ্গান (রাজস্থান) - এটি ছিল ঘাগড় নদীর তীরে।
• চানহুদারো - এটি মহেঞ্জোদারো দক্ষিণে সিন্ধু নদীর বাম তীরে অবস্থিত।
• লোথাল (গুজরাট) - এটি কাম্বাইয়ের উপসাগরের শীর্ষে অবস্থিত।
• সুরকোটদা (গুজরাট) - এটি কচ্ছের রানের শীর্ষে অবস্থিত।
• বনওয়ালি (হরিয়ানা) - এটি সরস্বতীর তীরে অবস্থিত ছিল, এখন বিলুপ্তপ্রায়।
• ধোলাভিরা (গুজরাট) - এটি খনন করা হয়েছে কচ্ছ জেলায়।

সামাজিক বৈশিষ্ট্য-

• সিন্ধু সভ্যতা ভারতের প্রথম নগরায়ন সভ্যতা।
• এটিতে সুপরিকল্পিত নিকাশী ব্যবস্থা, গ্রিড প্যাটার্ন এবং নগর পরিকল্পনা রয়েছে।
• তারা সমাজে সমতা অর্জন করেছিল।

ধর্মীয় তথ্য-

• মাতৃদেবী বা শক্তি হলেন মাতৃদেবী।
• যোনি পূজা এবং প্রকৃতি পূজা বিদ্যমান ছিল।
• তারা বট-অশ্বত্থ গাছের উপাসনা করত।
• লোকেরা যজ্ঞকুন্ড নামে অগ্নি পূজাও করত।
• পশুপতি মহাদেব পশুর অধিপতি হিসাবে পরিচিত।
• সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতার লোকেরা ইউনিকর্ন এবং গরুর মতো প্রাণী উপাসনা করত।

অর্থনৈতিক তথ্য-

• সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা কৃষির উপর ভিত্তি করে।
• এই সময়কালে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
• লোথালে একটি বন্দর পাওয়া গেছে।
• রফতানি ও আমদানি ছিল।
• তুলা উৎপাদক স্থান ছিল।
• পরিমাপের এককও ছিল।
• লোথালে পরিলক্ষিত হরপ্পা সংস্কৃতি্তে দেখা গেছিল এবং সত্যের উপস্থিতর ব্যবস্থাগুলির পরিমাপ প্রচলিত ছিল।
• ওজন/ভার চুনাপাথর, স্টিয়েটাইট ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হত এবং সেগুলি সাধারণত ঘনক্ষেত্রের আকার ধারণ করত।